পাকিস্তানের অভ্যুধ্যয় ও স্বাধীন বাংলাদেশঃ
১৯৪৭ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের নাম ছিল পূর্ববঙ্গ। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত বিভক্ত করে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয় যথা ভারত ও পাকিস্তান। মুসলিম আধিক্যের ভিত্তিতে পাকিস্তানের সীমানা চিহ্নিত করা হয় যার ফলে পাকিস্তানের মানচিত্রে দুটি পৃথক অঞ্চল অনিবার্য হয়ে ওঠে। 1. পূর্ব পাকিস্তানের। 2. পশ্চিম পাকিস্তান।
পাকিস্তানের স্বাধীনতার ইতিহাস?
১৯৪৮ সালের জুলাইতে দেশটির প্রথম স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন করা হয়, সেখানেও ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ তারিখটিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উল্ল্যেখ করা হয়। তবে পরবর্তী বছর হতে ১৪ আগস্ট তারিখটি স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে। ১৯৪৭ সালের ১৪-১৫ তারিখ রাতটি ছিলো ২৭ রমজান ১৩৬৬ হিজরি, এই রাতটিকে মুসলমানগন পবিত্র রজনী হিসেবে বিবেচনা করেন।
স্বাধীনতার আগে পাকিস্তানের ইতিহাসঃ
১৮৯৩ সালের মধ্যে, সমগ্র আধুনিক পাকিস্তান ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যের অংশ ছিল এবং ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের আগ পর্যন্ত তা ছিল ব্রিটিশদের অধীনে, আধুনিক পাকিস্তান বেশিরভাগই সিন্ধু বিভাগ, পাঞ্জাব প্রদেশ এবং বেলুচিস্তান এজেন্সিতে বিভক্ত ছিল। বিভিন্ন দেশীয় রাজ্য ছিল, যার মধ্যে বৃহত্তম ছিল বাহাওয়ালপুর।
পাকিস্তান নামকরণের ইতিহাস কী?
ফার্সি ও পশতু শব্দ 'পাক' অর্থ- পবিত্র। আর শব্দাংশ ـستان (-স্তান) একটি তৎসম-ফার্সি শব্দ যার অর্থ স্থান বা এলাকা। চৌধুরী রহমত আলী "নাউ অর নেভার" পুস্তকে এ নামটির প্রস্তাব দেন। আরবি ভাষায় এর অর্থ "মদিনা-এ-তৈয়্যাবা" বা পবিত্র স্থান, মদিনা শব্দের অর্থ এলাকা এবং তৈয়্যাবা অর্থ পবিত্র।
পাকিস্তান কত বছর বাংলাদেশ শাসন করেছিল?
পূর্ব পাকিস্তান গঠিত হয়েছিল প্রধানত পূর্ব বঙ্গ নিয়ে যা বর্তমানের বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষ ১৯৪৭-১৯৭১ মোট ২৭ বছর। এই সময়কে পাকিস্তান আমল হিসাবে উল্লেখ করে থাকে।
৫২ এর ভাষা আন্দলনঃ
ঢাকায় ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ মিছিল। ১৯৫২ সালের হিসেবে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক ছিল বাঙালি, যারা মোট নাগরিকের প্রায় ৫৪%। ঐ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) শুধুমাত্র উর্দুকে জাতীয় ভাষা হিসেবে ঘোষণার প্রতিবাদে বাঙালী ছাত্ররা সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে।
৬৯ এর গনআন্দোলন ও স্বাধীন বাংলাদেশঃ
১৯৬৯ সালের গণআন্দোলন ছিল পূর্ব পাকিস্তানের একটি ছাত্র-জনতার বিশাল আন্দোলন। এর প্রধান কারণ ছিল রাজনৈতিক দমন-পীড়ন, আইয়ুব খানের সামরিক শাসন, অসম উন্নয়ন ও বাঙালিদের প্রতি বৈষম্য।
১৯৬৯ সালের গণআন্দোলন বাঙালি জাতিকে রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ করে।শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৬ দফা দাবি জনসমর্থন লাভ করে।গণআন্দোলনই স্বাধীনতার চূড়ান্ত সংগ্রামের ভূমিকা তৈরি করে, যার ধারাবাহিকতায় আসে ১৯৭০ সালের নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের নামকরণ করেন কে?
১৯৬৯ সালের ৫ই ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন, "আমাদের স্বাধীন দেশটির নাম হবে বাংলাদেশ"। ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের নেতারা বিভিন্ন নাম প্রস্তাব করেন। পরে শেখ মুজিবুর রহমান "বাংলাদেশ" নামটি প্রস্তাব করলে তাতে সবাই একবাক্যে সায় দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনঃ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হলো বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন। ২০২৪ সালে বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে এটি গঠিত হয় এবং এটি কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তীতে অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩৬শে জুলাই ২০২৪ পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় এবং পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের নামঃ
প্রতিষ্ঠার পর থেকে একাধিক সমন্বয়ককে এই সংগঠনের নেতৃত্বে দেখা গেছে। যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত রশিদ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী সারজিস আলম, ইংরেজি বিভাগের হাসনাত আবদুল্লাহ, ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের আসিফ মাহমুদ,ভূগোল বিভাগের আবু বাকের মজুমদার, ও সাদিক কায়েম,ঢাবি শাখার শিবির সভাপতি, ফরহাদ ঢাবি শাখার শিবির নেতা ,ছাত্র আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক , নওসাজ্জামান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সমন্বয়ক, শিবিরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক হিসেবে পরিচিত। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের খান তালাত মাহমুদ রাফি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসঃ
২০২৪ সালের ১ জুলাই সংগঠনটি সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের লক্ষ্যে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে চার দফা দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা লাগাতার কর্মসূচি দেয়।
অসহযোগ আন্দোলনঃ
৩ আগষ্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেয়া হয় অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা।কেউ কোনো ধরনের ট্যাক্স বা খাজনা প্রদান করবেন না এবং সকল ধরনের সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত ও কল কারখানা বন্ধ থাকবে।
নূতন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ঃ
৩ আগস্ট শহীদ মিনার থেকে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম সরকার পদত্যাগের এক দফা আন্দোলন ঘোষণা করেন। এক দফা ঘোষণার সময় শহীদ মিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন অন্যান্য সমন্বয়করা। তারা হলেন নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও আবদুল কাদের।
শুরুতে ৬ই আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন "লং মার্চ টু ঢাকা" কর্মসূচি ঘোষণা করে। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় সমন্বয়করা কর্মসূচি একদিন এগিয়ে এনে ৫ই আগস্ট ঘোষণা করেন। আন্দোলনকে ঘিরে ৫ আগস্ট অনেক জেলায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সংঘর্ষ এবং গোলাগুলির ঘটনা ঘটে, এতে ১০৮জন সাধারণ নাগরিক ও পুলিশ নিহত হয়।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা এক দফা দাবির প্রেক্ষিতে সম্মিলিত ছাত্র-জনতার এক গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করেন এবং দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এরই মধ্য দিয়ে তার ১৫ বছরেরও বেশি সময়ের শাসনের অবসান ঘটে এবং নূতন বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের সংখ্যা ?
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে মোট ১ হাজার ৫৮১ জন নিহত,আহত ৩১,০০০ হাজার,সুত্র বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্যবিষয়ক উপকমিট।